আজ বৃহস্পতিবার, ২১শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রূপগঞ্জে অবৈধ গ্যাস সংযোগে চলছে শতাধিক ডাইং কারখানা

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
প্রশাসন ও নেতা ম্যানেজ করেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে রূপগঞ্জের যত্রতত্র গড়ে উঠা ছোটবড় প্রায় শতাধিক ডাইং কারখানা। এরা কোন ধরনের নিয়মনীতি না মেনে কারখানাগুলোর বর্জ্যের পানি এলাকার পরিবেশ দূষন করে যাচ্ছে। এতে করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার বসবাসরত মানুষ। প্রশাসনও রয়েছে নিরব ভূমিকায়। প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষের কোন তৎপরতা না থাকায় এলাকাবাসী ফুঁসে উঠছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলে কারখানাগুলো সরকারের কোন প্রকার অনুমোদন বা লাইসেন্স না থাকায় কারখানাগুলো থেকে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। প্রশাসন ও স্থানীয় নেতা ম্যানেজ করে রূপগঞ্জে এ রকম শতাধিক ডাইং কারখানায় অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে।

জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল সাওঘাট এলাকায় রয়েছে নুরে মদিনা ডাইং, সাওঘাট কাতরারচক এলাকায় ফুজি ডাইং ও মিতা ডাইং, গোলাকান্দাইল হাট সংলগ্ন পূর্বপাড়া এলাকায় হাসান ডাইং, গোলাকান্দাইল উত্তর পাড়া এলাকায় জামান ডাইং কারখানা পরিবেশ দূষনে দায়ী বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব ডাইং কারখানা পরিবেশ দূষনের জন্য যেমন দায়ী তেমনি ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি করছে। এদের দূষিত বর্জ্যরে পানি ফসলী জমিতে সরাসরি গিয়ে পড়ছে। এতে করে গোলাকান্দাইল, সাওঘাট, মাহনা, আধুরিয়া ও দড়িকান্দি এলাকার প্রায় ৭শ একর জমির ফসল বিনষ্ট হচ্ছে। এসব জমিতে সারা বছর কালো পানি জমে থাকার কারনে কোন প্রকার ফসল ফলাতে পারছেনা কৃষকরা। এতে করে কম মূল্যে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে তারা।

গোলাকান্দাইল পূর্বপাড়া এলাকায় গ্রামের ভিতরে হাসান ডাইং কারখানা গড়ে উঠার ফলে এলাকাবাসী পড়ছে স্বাস্থ্য ঝুকিতে। এলাকার অনেকেই বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারখানার বর্জ্যের পানি সরাসরি টাটকী খালে গিয়ে পড়ছে। এতে গোলাকান্দাইল ও দড়িকান্দি মৌজার কয়েকশ একর জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও কোন কর্ণপাত করছেনা কারখানা কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ডাইং কারখানা বন্ধের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী।

হাসান ডাইং কারখানার আশ পাশে প্রায় ৪ হাজার পরিবার স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে। কারখানাটি গত ২ বছর যাবত চালু রয়েছে। গ্যাস সংযোগ না পেয়ে কয়লা কাঠ দিয়ে কারখানাটি চালিয়ে আসছে। ফলে কারখানার কালো ধুয়া ও কেমিক্যাল মিশ্রিত পানিতে এলাকাবাসীর শরীরে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। ম্যালেরিয়া, শ্বাসকষ্ট, এজমাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছে লোকজন। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশী। এলাকার বেশীরভাগ মানুষ গরীব বলে অনেকেই চিকিৎসার টাকা জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে। এ সুযোগে কাখানার মালিক হাসান মিয়া এলাকার অনেক অসহয় গরীব শিশুদের দিয়ে কম বেতনে কারখানার কাজে নিচ্ছে। এতে করে শিশুরা লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অমান্য করা হচ্ছে শিশুশ্রম আইন।

জানা যায় ডাইং কারখানার মালিক মোঃ হাসান মিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও ইটিপি প্লান না নিয়েই এই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে কারখানা নির্মাণ করে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করে আসছে। কারখানার বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকাবাসী ফুঁসে উঠছে। প্রতিবাদে এলাকাবাসী মহাসড়ক অবরোধ করতে পারে বলে গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে।

গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মোঃ ইলিয়াস জানান, এলাকায় বিভিন্ন ডাইং কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত বর্জ্যের পানি পুকুর, ডোবা, খাল-বিলে জমা হচ্ছে। আর এই পানিতে রোগবাহী মশা মাছি সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে চুলকানি ও ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু বৃদ্ধসহ সববয়সী মানুষ। এসকল রোগিদের স্থানীয় হাসপাতালগুলো চিকিৎসা দিতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে।
এ ব্যাপারে হাসান ডাইং কারখানার মালিক পক্ষকে জানালেও কোন প্রতিকার না পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকাবাসী।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, শিশুশ্রম বেআইনী। তাছাড়া জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের কারখানা নির্মাণ করে পরিবেশের ক্ষতি করা যাবে না। খুব শীঘ্রই হাসান ডাইং কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

এছাড়া শুধু ডাইং কারখানা নয় রূপগঞ্জের সাওঘাটে গড়ে উঠছে অবৈধ কেমিক্যালের দোকান। সেখানে বিস্ফোরক কেমিক্যাল বিক্রি করা হচ্ছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে সাওঘাটে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। আব্দুল্লাহ কেমিক্যাল নামের দোকানে অবৈধ কেমিক্যাল বিক্রি করা হয়। তার কোন লাইসেন্স নেই। সরকারকে কর ফাঁকি দিচ্ছে সাওঘাটে অবস্থিত আব্দুল্লাহ কেমিক্যালের পরিচালক ফজলুল হক।